জলবায়ু ও দুর্যোগ (অধ্যায় ৬)

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - | NCTB BOOK
654
654
common.please_contribute_to_add_content_into জলবায়ু ও দুর্যোগ.
common.content

জলবায়ু পরিবর্তন

402
402

কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের পড় তাপমাত্রা ও গড় বৃষ্টিপাতকে আবহাওয়া বলে। কোনো স্থানের আবহাওয়া পরিবর্তনের নির্দিষ্ট ধারাই জলবায়ু। জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। সাধারণত ৩০-৪০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়ার গড়কে জলবায়ু বলা হয়। প্রাকৃতিক অবস্থান এবং জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে।

বিভিন্ন কারণে বিশ্বের জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। এর একটি অন্যতম কারণ মানবসৃষ্ট দূষণ, যেমন- শিল্প কলকারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়া। এর ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একদিকে বরফ গলে যাচ্ছে, অন্যদিকে জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যা যা ঘটছে- 

• গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

• অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি হচ্ছে। 

• ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। 

• বারবার ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। 

• মাটির লবণাক্ততা বেড়ে কৃষিজমির ক্ষতি হচ্ছে। 

• গাছপালা ও বিভিন্ন প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

• ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা ব্যাপক হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে খাদ্য উৎপাদন, বাড়িঘর, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই এই দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষত: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

 

ক. এসো বলি

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি শিক্ষকের সহায়তার আলোচনা কর । 

• আমরা পরিবেশের কী কী ক্ষতি সাধন করি? 

• এর ফলে পরিবেশের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে? 

• পরিবেশের বিপর্যয়ে পৃথিবী কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে? 

• আমরা কীভাবে এটি রোধ করতে পারি?


খ. এসো লিখি

নিচের দুইটি কলামে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও ফলাফল লেখ। কাজটি জোড়ার কর।

ভালবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট কারণজলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল
  
  
  


গ. আরও কিছু করি

২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সিডরের মতো আরও কিছু ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের কর। ঘণ্টায় এর গতিবেগ ছিল ১৬০ কিলোমিটার যা ৩,৪৪৭ জনের জীবনহানি ঘটায়। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় ৩৩০ জন মানুষ মারা যায়, ৮২০৮ জন নিখোঁজ হয় এবং ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝগুলো সম্পর্কে তোমার পরিবারের লোকজনের/শিক্ষকের কী মনে আছে তা জেনে নাও ।


ঘ. যাচাই করি

অল্প কথায় উত্তর দাও :

তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পরিবেশের কী কী ক্ষতি হয়?

common.content_added_by

নদীভাঙন

444
444

বাংলাদেশে অসংখ্য নদী রয়েছে। তাই এদেশের অনেক জায়গাতেই নদীভাঙনের প্রবণতা দেখা যায়। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে আমাদের মূল্যবান কৃষি জমি, বাড়িঘর সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার বিলীন হয়ে যায়। ফলে আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবন ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়।

নদীভাঙন

বন্যা নদীভাঙনের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক কারণ। বন্যার অতিরিক্ত পানির স্রোত ও ঢেউ নদীর পাড়ে আঘাত হানে, ফলে বন্যার সময় নদীভাঙন শুরু হলে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। নিচের মানবসৃষ্ট কারণগুলোও নদীর পাড় ভাঙনের জন্য দায়ি -

• নদী থেকে বালি উত্তোলন 

• নদী তীরবর্তী গাছপালা কেটে ফেলা

মানবসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কারণে অনেক সময় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

ক. এসো বলি

তোমার এলাকায় বা এলাকার আশপাশে কোনো নদী বা জলাশয় নিয়ে শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর।

• ঐ নদীতে কি কখনো বন্যা হয়েছে? 

• নদীর তীরে কোনো স্থাপনা দেখেছ কি? 

• বন্যার প্রভাবে কী হয়?


খ. এসো লিখি

নদীভাঙনের মানবসৃষ্ট কারণ এবং এর ফলাফল সম্পর্কে লেখ। কাজটি জোড়ায় কর।

মানবসৃষ্ট কারণ 
ফলাফল 


গ. আরও কিছু করি

পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পাড় রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যেমন : 

• বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ তৈরি 

• সেচের জন্য কালভার্ট ও স্লুইস গেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা 

• বন্যায় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া 

তোমার এলাকার বন্যা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কী করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে মতামত জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি চিঠি লেখ।


ঘ. যাচাই করি

অল্প কথায় উত্তর দাও :

নদীভাঙনের ফলে কী হয় ?

common.content_added_by

খরা

180
180

আমাদের দেশের কোনো কোনো অঞ্চল যেমন নদীভাগুনের শিকার হচ্ছে, আবার কোনো কোনো অঞ্চল খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে শুল্ক আবহাওয়া ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং অল্পসংখ্যক নদী থাকার কারণে খরার প্রবণতা বেশি ।

মানব সৃষ্ট কারণেও ধরা হয়: 

• গাছ কেটে ফেলা (গাছের শিকড় মাটির মধ্যকার পানি ধরে রাখে) 

• অধিক হারে ভবন নির্মাণের ফলে মাটি কংক্রিটে ঢেকে যায় এবং এই কংক্রিট পানি ধরে রাখে না 

• কলকারখানার মাধ্যমে বায়ু দূষণের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং পরিবেশ শুল্ক হয়ে যায়

খরাপীড়িত অঞ্চল

খরার ফলাফলগুলো হলো : 

• পুকুর, নদী, খাল ও বিল শুকিয়ে যার 

• মাঠে ফসল ফলাতে কষ্ট হয় 

• গবাদি পশুর খাদ্যসংকট দেখা দেয় 

• খাবার পানির অভাব দেখা যায়

 

ক. এসো বলি

পাশের মানচিত্রে লাল রঙে চিহ্নিত অঞ্চলগুলো সবচেয়ে খরাপ্রবণ এলাকা। শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর :

• অঞ্চলগুলো কোন কোন বিভাগে অবস্থিত? 

• এই অঞ্চলগুলোর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য কী কী ?


খ. এসো লিখি

নিচের প্রতিটি ক্ষেত্রে খরার প্রভাব লেখ, কাজটি জোড়ায় কর।

নদী 
মাঠ 
পশু 
মানুষ 


গ. আরও কিছু করি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মতে, 'বর্ষা মৌসুমের প্রধান ফসল আমন ধানের শতকরা ১৭ ভাগেরও বেশি সাধারণত এক বছরে খরার কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।' এই ধারণার প্রেক্ষিতে খরার কারণ এবং প্রভাব লেখ।


ঘ. যাচাই করি

বাক্যটি সম্পূর্ণ কর :

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরার প্রবণতা বেশি কারণ…………………………………………………………….

 

common.content_added_by

ভূমিকম্প

133
133

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের নিশ্চিত ঝুঁকি রয়েছে। পাশের মানচিত্রে এলাকা-১ এর উত্তর-পূর্ব অঞ্চল অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল এবং এলাকা-৩ এর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল তুলনামূলক কম ভূমিকম্পপ্ৰৰণ অঞ্চল।

মৃদু ভূমিকম্প মোকাবিলায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি সতর্কতা অবলম্বন করলে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ভূমিকম্পে বিধস্ত ভবন

বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এর দ্বিতীয় ঝুঁকি হিসেবে সুনামি ও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

ক. এসো বলি

যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার বাড়িতে আমরা কী কী পূর্ব প্রতি নিতে পারি তা শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর। ভূমি কীভাবে প্রতিবেশীদের দুর্যোগের পূর্বাভাস জানাবে?

সতর্কতা অবলম্বনের প্রচার কাজ


খ. এসো লিখি

নিচের পূর্বপ্রস্তুতিগুলোকে ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্প চলাকালীন এবং ভূমিকম্পের পরে এই তিনটি ভাগে ভাগ কর। ভূমিকম্পের সময়, আগে ও পরে কী করতে হবে সে বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করতে একটি পোস্টার তৈরি কর। কাজটি জোড়ায় কর।

• পুরোপুরি শাঙ্ক থাকতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করা যাবে না। 

• বিছানার থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। 

• কাঠের টেবিল বা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। 

• বারান্দা, আলমারি, জানালা বা ঝোলানো ছবি থেকে দূরে থাকতে হবে। 

• পাকা দালানে থাকলে বিমের পাশে দাঁড়াতে হবে। 

• প্রথম ভূকম্পন থেমে যাবার পর সারিবদ্ধভাবে ঘর থেকে বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। 

• প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বাড়িতেই রাখতে হবে। 


গ. আরও কিছু করি

২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল নেপালে সংঘটিত ভূমিকম্প সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে লেখ।


ঘ. যাচাই করি

সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও ।

নিচের কোনটি অভিমাত্রার ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা?

ক. সিলেট              খ. বরিশাল            গ. বরিশাল           ঘ. চট্টগ্রাম 

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion